সিলাকান্থ কি? চিরতরে বিলুপ্ত হওয়া সিলাকান্থের ফিরে আসার রহস্য

সিলাকান্থ কি

সিলাকান্থ (Coelacanth) হলো একটি প্রাচীন এবং বিরল মাছ। সিলাকান্থ এর বৈজ্ঞানিক নাম Latimeria। সিলাকান্থ প্রায় ৪০ কোটি বছর ধরে আছে এই পৃথিবীতে। এটি জীবন্ত জীবাশ্ম (Live Fossil) হিসেবে পরিচিত। 


সিলাকান্থের বৈশিষ্ট্য বা দৈহিক গঠন 

পোস্টসূচীপত্রঃসিলাকান্থের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর পাখনাগুলি। এর পাখনাগুলো হাড় ও মাংস যুক্ত, যা অন্যান্য মাছের থেকে আলাদা করে। এই পাখনাগুলো সিলাকান্থ কে পানির নিচে হাঁটার মতো চলাফেরা করতে সাহায্য করে। 
সিলাকান্থ ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং একটি প্রাপ্তবয়স্ক সিলাকান্থের ওজন প্রায় ৯০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। 

সিলাকান্থের দেহে একটি অব্যবহৃত ফুসফুস রয়েছে। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ব্যবহৃত হয় না, বরং এটি তেলপূর্ণ থলির মতো কাজ করে। এই মাছের শরীর মোটা ও শক্ত আশ দিয়ে আবৃত। এই আশ শিকারিদের আক্রমণ থেকে তাদের রক্ষা করে। 
সিলাকান্থের মাথায় "রোস্ট্রাল অর্গান" নামে একটি বিশেষ সংবেদনশীল অংশ রয়েছে। এটি পানির মধ্যে বৈদ্যুতিক সিগন্যাল শনাক্ত করতে পারে এবং অন্ধকারে শিকার খুজে পেতে সহায়তা করে। সিলাকান্থের মাথার খুলি দুইভাগে বিভক্ত। এর মস্তিষ্ক তুলনামূলক খুবই ছোট, এই মাছের শরীরের তুলনায় মস্তিষ্কের আকার মাত্র ১-২%।

সিলাকান্থের বিবর্তনীয় ইতিহাস 

সিলাকান্থ মাছ পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন জীবিত জীবাশ্ম হিসেবে পরিচিত। সিলাকান্থ মাছের উৎপত্তি হয় আজ থেকে প্রায় 40 কোটি বছর আগে, ডেভোনিয়ান যুগে। এটি সেই যুগের প্রথম লোব-ফিনযুক্ত মাছদের মধ্যে অন্যতম। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, "সিলাকান্থ এবং লোব-ফিনযুক্ত মাছেরা চার পায়ের মেরুদণ্ডী প্রাণীদের পূর্বপুরুষ। যারা পরবর্তীতে ভূমিতে চলাচল করে সক্ষম হয়"


ধারণাকৃত বিলুপ্তি 

বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, "সিলাকান্থ প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষের দিকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে" 

কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে এটি ৬৬ মিলিয়ন বছর পরে ফিরে আসে।

চিরতরে বিলুপ্ত হওয়া সিলাকান্থের ফিরে আসার রহস্য 

সিলাকান্থ হারিয়ে গিয়েছিল ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে। একসময় ভাবা হয়েছিল এটি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিজ্ঞানের ভাষায় সিলাকান্থ কে জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয়, কারণ এই মাছের অস্তিত্ব ছিলো ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে। সিলাকান্থের জীবাশ্ম দেখে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন ডাইনোসরের মতো সিলাকান্থ ও হয়তো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কারণ তখনও পর্যন্ত সিলাকান্থের নাম ছিলো জীবাশ্মের তালিকায়। 

কিন্তু ১৯৩৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার চালুমনা নদীতে একটি জীবিত সিলাকান্থ ধরা পড়ে। এটি আবিষ্কার করেন মার্জরি কোর্টনি-লাটিমার। তিনি একজন ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ। মাছের রং, আকৃতি এবং পাখনা দেখে বিজ্ঞানীদের চোখ তখন কপালে। পরীক্ষা করে দেখা গেলো- মাছটি কোনো নতুন প্রজাতির নয়, বরং এটি সেই সিলাকান্থ যাকে বিলুপ্ত মনে করা হয়েছিল। 

সিলাকান্থের জীবনচক্র

সিলাকান্থের জীবনচক্র অত্যন্ত রহস্যময়। আবিষ্কৃত তথ্য অনুযায়ী এর জীবনচক্র বেশ ধীর এবং দীর্ঘস্থায়ী। অন্যান্য মাছের মতো সিলাকান্থ ডিম পাড়ে না। ডিমগুলি মা সিলাকান্থের দেহের অভ্যন্তরেই বিকশিত হয়। নিষেক অভ্যন্তরীণভাবে ঘটে এবং পুরুষ সিলাকান্থ একটি বিশেষ অঙ্গ ব্যবহার করে স্ত্রী সিলাকান্থকে নিষিক্ত করে। এই মাছের গর্ভধারণকাল বেশ দীর্ঘ হয়। সিলাকান্থের গর্ভধারণকাল প্রায় ৩ বছর। 


ডিমগুলি মাতৃগর্ভেই ধীরে ধীরে বিকশিত হয় এবং সম্পূর্ণ গঠিত অবস্থায় বাচ্চা বের হয়। প্রতিবার গর্ভধারণে সাধারণত ৫-২৫ টি বাচ্চা জন্ম দেয়। জন্মের পরপরই বাচ্চারা সম্পূর্ণ বিকশিত হয় এবং নিজেরা শিকার ধরতে সক্ষম হয়। এরা খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং এরা এদের জীবনের বেশ বহু বছর কৈশোরে থাকে। সিলাকান্থদের যৌন পরিপক্ব হতে ১৫-২০ বছর সময় লাগে। সিলাকান্থ দীর্ঘজীবী প্রাণী। সিলাকান্থরা তাদের জীবনের শেষ পর্যায়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রধানত শিকার ধরার অভাবে এরা প্রাকৃতিকভাবে মারা যায়। তবে, পরিবেশগত পরিবর্তন এবং শিকারির জালে/ফাদে ধরা পড়ার কারণে এদের সংখ্যা হ্রাস পায়। 

বিলুপ্তির ওপার থেকে ফিরে আসা সিলাকান্থ এখনো বিপন্ন। সমুদ্রে এদের সংখ্যাও খুবই কম। গবেষকরা এটিকে রক্ষার জন্য কাজ করে নিরন্তর, আমাদেরও দ্বায়িত্ব এই রহস্যময় বিপন্ন মাছটিকে রক্ষায় সহায়তা করা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪